যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ব্যুরো : গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে চূড়ান্ত নির্মমভাবে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রবল তোপে কার্যত কাঠগড়ায় রাজ্য। তারই প্রতিফলন ঘটল দৃষ্টান্তমূলক একটি রায় দানে। গত ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাতে আর জি করে একদল বহিরাগত ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিশেষত সেই অংশে যেটাকে মনে করা হচ্ছে অপরাধের স্পট অর্থাৎ অকুস্থল। পুলিশ সেদিন আশ্চর্যজনকভাবে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকে কার্যত পালিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাকে সামনে রেখেই রাজ্যের রাজধানীর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব চলে গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে ।

এখন প্রশ্ন হল মহামান্য সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ কি সুদূরপ্রসারী কোনো ইঙ্গিত বহন করছে ? বলা বাহুল্য রাজ্য সরকার কিন্তু যথেষ্ট অ্স্বস্তিতে এবং বিপাকে।কার্যত সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাজ্যের শাসকদল।রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্য সরকারের একতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।তাই স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশেরই।সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে ঠিক এই জায়গাতেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতা প্রমাণিত হল । এই ঘটনার প্রতিফলন যে সুদূরপ্রসারী এবং ভবিষ্যতে অনেক রাজনৈতিক সমীকরণের দরজা খুলে দেবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক মহলের অধিকাংশেরই কোন সন্দেহ নেই। শাসক দল মহামান্য আদালতের এই নির্দেশকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কায় দেখছে এই আশঙ্কা কিন্তু অমূলক নয় ।
সংবিধানের ৩৫৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব বাইরে থেকে ঘটা অথবা ভিতরের বিশৃঙ্খলা থেকে রাজ্যকে রক্ষা করা এবং সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য যাতে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা সুতরাং এটি কার্যত সংবিধানের ৩৫৫ ধারা সরাসরি প্রয়োগ না করে ঘুরপথে প্রয়োগ বলা যেতে পারে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব কে চিঠি দিয়ে প্রথম আরজি করে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের আবেদন জানান। রাজ্যের বিপর্যস্ত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সেই আবেদনেই এবার সুপ্রিম কোর্টের শীলমোহর পড়ল বলা যায। ফলে বিরোধীপক্ষরা ভবিষ্যতে রাজ্যের শাসক দলকে যথেষ্ট কোনঠাসা করার বিরাট হাতিয়ার পেয়ে গেল বলে রাজনৈতিক মহলের অধিকাংশ মনে করছেন ।
তবে এই মুহূর্তে সকল রাজনৈতিক সমীকরনের ঊর্ধ্বে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে রাজ্য সরকার সর্বতভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করছে ও করবে এবং তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনার প্রকৃত দোষী বা দোষীদের ফাঁসির শাস্তি চান। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন তার সঙ্গে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ একমত।
কার্যত দেশের সর্বোচ্চ আদালত যেভাবে রাজ্য সরকারকে তোপ দেগেছে তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের বিরোধিতা করা মানে যে কার্যত রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি আরো সংকট জনক করে তোলা ,এই বাস্তব সত্যটা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন বৈকি।