যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ডেস্ক:
Report by : Niranjan Dey ●Digtal Arrangement : Tista Mondal ● Graphix : Laboni De

কলকাতা ,১৫ ডিসেম্বর : নিজেকে জাহির করতেন তারকা ফুটবলারওয়ালা হিসেবে ! ভারতে তথা কলকাতায় এনেওছিলেন গুটিকয়েক বিশ্বতারকা ফুরবলারকে।১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ দিনটিতেও তিনি ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে নায়ক হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু হয়ে গেলেন খলনায়ক ! হতে পারতেন হিরো। কিন্তু হয়ে গেলেন হেরো। গত শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই চূড়ান্ত ফ্লপ মেসি শো নিয়ে দর্শক-পুলিশ খন্ডযুদ্ধ ও তোলপাড়ের মাঝে যে নামটি সবার আগে উঠে আসছে ‘ভিলেন’ সেটি হলো শতদ্রু দত্ত।গত কয়েক মাস ধরে কলকাতা তথা বাংলাকে মেসির স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। ভক্তদের ভগবানকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। আর এই শতদ্রুই ইভেন্টের দিন হলেন ‘ভিলেন’। রাজনৈতিক নেতা থেকে দর্শক প্রত্যেকের মুখেই শতদ্রুর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ।
তিনদিনের ভারত সফরে শুক্রবার গভীর রাতেই কলকাতায় আগমন বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির।পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার সকাল ১১:৩০ নাগাদ যুবভারতীতে উপস্থিত হয়েছিলেন আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার।হাজার হাজার মেসি ভক্তরা তাদের ভগবানকে একপলক দেখার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করে মাঠে এসেছিলেন।যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।মেসির কয়েকটি দার্থক তথা ফ্যান সংযোগ মূলক কর্মসূচি ছিল।প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল দর্শকদের সেইভাবে। কিন্তু বাস্তবে কি ঘটল ! কিছু চরম হ্যাংলা ভিভিআইপি , নেতা ও মন্ত্রীদের আদিখ্যেতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় তাকে দেখতেই পেলেন না দর্শকরা ! এমনভাবে কিছু লোক মেসিকে ঘিরে রাখলেন যে আগত হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী ও মেসি ভক্তরা দেখতেই পেলেন না এম এল ১০ কে।

স্বাভাবিকভাবেই দর্শকরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে যুবভারতী লণ্ডভণ্ড করে দেয়। মাঠে ঢুকে যায় অসংখ্য লোক, গ্যালারি থেকে অসংখ্য চেয়ার ও জলের বোতল ছোড়া হয় বৃষ্টির মতো। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একটা অংশে।উপরে ফেলা হয় টেন্টও।এক সময় পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি। নামানো হয় র্যাফ। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর শনিবারই বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় কলকাতা এবং হায়দ্রাবাদের G.O.A.T ইভেন্টের আয়োজক শতদ্রুকে।তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলি সামনে এসেছে সেগুলি হল- অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি, দর্শক ব্যবস্থাপনায় চরম ব্যর্থতা, নিরাপত্তা ও প্রোটোকলে গাফিলতি, ভক্তরা মেসির সরাসরি দর্শন না পাওয়া।সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী আদালতে পেশ করা হয়েছে শতদ্রুকে।
কে এই শতদ্রু দত্ত ?
হুগলি জেলার রিষড়ার বাসিন্দা শতদ্রু। শ্রীরামপুরের হলি হোম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন শতদ্রু , ছোটবেলায় ক্রিকেটও খেলতেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে ফিনান্স ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজ করতেন তিনি। খেলাধুলা বিশেষত ফুটবল নিয়ে প্রবল আগ্রহ ছিল শতদ্রুর। সেই প্যাশনটাই পরবর্তীতে প্রফেশন হিসেবে বেছে নেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্কৃতির ছোঁয়া তিনি কলকাতা তথা ভারতে ছড়িয়ে দেবেন বলে ঠিক করে ফেলেন। এই মর্মেই একের পর এক ফুটবলারকে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন তিনি। নিজের জামাইবাবুর সঙ্গে ইভেন্টের কাজ শুরু করলেও , পরে এই কাজ একাই এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। নিজের বাড়ির ছাদেই গড়ে ফেলেন এক ফুটবল মাঠ।শতদ্রুর সংস্থার নাম ‘আ শতদ্রু দত্ত ইনিশিয়েটিভ’। এই সংস্থা শতদ্রুকে একের পর এক স্বপ্নের প্রজেক্টে সাফল্য এনে দিয়েছে। তিনি একজন স্পোর্টস প্রোমোটার এবং ইভেন্ট অর্গানাইজারও। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মেসিকে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন শতদ্রু।প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য,শুধু মেসিই নন এর আগে পেলে , মারাদোনা, ও কাফুকে-র মত তারকা ফুটবলারদেরও ভারতে এনেছিলেন এই শতদ্রুই, এই ভাবেই ঘটে তার উত্থান।
মেসির সঙ্গে শতদ্রুর যোগাযোগ কিভাবে?
মেসির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্ক নেই। এই সফরে শতদ্রু দও ছিলেন লোকাল প্রোমোটার ও সমন্বয়কারী।
এদিনের ইভেন্টের মোট খরচ কত ছিল?
সূত্রের খবর, আনুমানিক হিসাব- মেসির অ্যাপিয়ারেন্স ফি: ১০ – ১৫ কোটি টাকা। ভেন্যু , নিরাপত্তা, মঞ্চ , প্রযুক্তি: ৫- ৭ কোটি টাকা। প্রমোশন, টিকিটং, মিডিয়া , স্টাফ : ৩-৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট আনুমানিক বাজেট ২০-২৫ কোটি টাকা।
শতদ্রু দত্ত কত টাকা পেয়েছেন?
এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও সরকারি তথ্য নেই। সাধারণত এইরকম ইভেন্টে প্রোমোটাররা পেয়ে থাকেন নির্দিষ্ট প্রোমোটার ফি অথবা মোটা বাজেটের কমিশন শতাংশ হিসেবে। আনুমানিক ১-৩ কোটি টাকা শতদ্রুর ফি হতে পারে।
বর্তমানে পরিস্থিতি কি?
শুধু কলকাতাতেই নয় হায়দ্রাবাদের G.O.A.T ইভেন্টেরও আয়োজক ছিলেন এই শতদ্রুই।তবে হায়দ্রাবাদে সুষ্ঠুভাবে ইভেন্ট পরিচালিত হতে দেখা যায়।সেখানে মেসিও ছিলেন যথেষ্ট প্রাণবন্ত। পেনাল্টি শুট আউট থেকে দর্শকদের উদ্যেশ্যে কিক করে বল পাঠানো ইত্যাদি সবই তাঁকে করতে দেখা গেছে ফুরফুরে মেজাজে। ফুটবলের মক্কা কলকাতায় এমন বিশৃঙ্খলের কারণ কি?এ বিষয়ে পুলিশি পূর্ণ তদন্ত চলছে।সুতরাং রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। টিকিটের টাকা ফেরতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ।এ বিষয়ে আর্থিক ও প্রশাসনিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।●