লেখক : ড. নির্মল দে
ডিজিটাল উপস্থাপনা : তিস্তা মন্ডল ও লাবনী দে
Last update : 3.50pm
যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ব্যুরো (Dial : 7604097600)
কলকাতা, ৮ আগস্ট:ভূপেন হাজারিকা–নামটি শুনলেই যেন প্রাণে বেজে ওঠে অসমের মাটির সুর।যার সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার গান , প্রতিবাদী পরিশীলিত কণ্ঠস্বর আকৃষ্ট করেছিল ,মোহিত গোটা দেশ তথা প্রবাসীদেরও।ভূপেনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামের তিনসুকিয়া জেলায়। এবছর এই সঙ্গীতশিল্পীর জন্মশতবর্ষের সূচনা।
শুধু সুরে বুঁদ হওয়া নয়, এত বছর পরেও তাঁর গান বলে মানুষের সংগ্রাম, ভালবাসা আর আশার গল্প। এক সময়, উত্তর-পূর্বের সঙ্গে গোটা ভারতের মেলবন্ধনের অন্যতম প্রধান সেতু হয়ে উঠেছিল তাঁর কণ্ঠ। অসমের মাটির সুর, পাহাড়ি মেজাজ, তার সঙ্গে দেশজ প্রাণ মিশিয়ে ভূপেন হাজারিকা গানে যে নতুন এক ধারা এনেছিলেন তৎকালীন সামাজিক পরিস্থিতি তাঁর গানে অনেক জোরালো ভাবে ফুটে উঠেছে। তবে প্রতিবাদী সত্তা গানগুলির মধ্যে নিশ্চয়ই আছে।

ভূপেন হাজারিকা ছিলেন একজন প্রতিভাবান ও বহুমুখী শিল্পী, যিনি শুধু আসাম ও বাংলাতেই নন, বরং ভারত ও বাংলাদেশজুড়ে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর লড়াই ছিল মূলত একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চেতনাকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা, যেখানে তিনি তাঁর গান ও সিনেমার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। এছাড়া তিনি তাঁর জীবনকালে একজন লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চলচ্চিত্ৰ পরিচালক এবং সম্পাদক হিসেবেও নিজের অবদান রেখেছেন।
কিশোর বয়সেই তিনি বিষ্ণু রাভা-এর মাধ্যমে সৌমেন ঠাকুরের সংস্পর্শে এসে মার্কসবাদী চেতনার সংস্পর্শে আসেন এবং সৌমেন ঠাকুরের পত্রিকায় তাঁর লেখা গান প্রকাশিত হত। নিউ ইয়র্কে থাকাকালীন তিনি নাগরিক অধিকার কর্মী পল রোবেসন-এর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন, যা তাঁর উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পান।

তাঁর গানের মাধ্যমে তিনি আসাম, বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি ও মানুষের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তিনি তাঁর গান ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাধারণত সামাজিক বৈষম্য, মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। ভূপেন হাজারিকার গান ও কাজ সবসময়ই রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বহন করত। তিনি তাঁর শিল্পকে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
ভূপেন হাজারিকার লড়াই ছিল এক বিশাল প্রেক্ষাপটে, যেখানে তাঁর শিল্প ছিল তাঁর অস্ত্র, এবং তাঁর লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা। তাঁর কাজ আসামের আঞ্চলিক পরিচয় ও সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে, যা আসামের মানুষের জন্য একটি বড় গৌরব ছিল।
ভূপেন হাজারিকার কয়েকটি গান :
• মানুষ মানুষের জন্য
• আমি এক যাযাবর
• বিস্তীর্ণ দুপারের অসংখ্য মানুষের
• হে দোলা হে দোলা
• সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল
• সহস্র জনে মোরে প্রশ্ন করে মোর প্রেয়সীর নাম
• আজ জীবন খুঁজে পাবি
• ও মালিক সারা জীবন কাঁদালে যখন
• গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা
• সাগর সংগমে সাঁতার কেটেছি কত