দুর্ঘটনার কবলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস : বন্দে ভারত উৎসাহের আড়ালে কি চূড়ান্ত অবহেলা ?

নিজস্ব প্রতিনিধি : হঠাৎই এক ভয়ঙ্কর চিৎকারে কেঁপে উঠল রাঙাপানি এলাকা। সোমবার সকাল পৌনে নটা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন রাঙাপানিতে কলকাতা গামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এর সঙ্গে একটি মালগাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে। মালগাড়িটি পিছন দিক থেকে এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস কে।ভয়ঙ্কর এই সংর্ষের ফলে ট্রেনের একটি বগি উঠে যায় মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপর এবং আরো দুটো বগি লাইন থেকে সরে গিয়ে দুপাশে ছিটকে পড়ে । রেল লাইনের দিকে থেকে ভেসে আসা মানুষের আর্তনাদ শুনে তৎক্ষণাৎ গ্রামের বাসিন্দাররা উপস্থিত হন রেল লাইনের কাছে। এবং একের পর এক উদ্ধার করতে থাকেন আহত যাত্রীদেরকে। গ্রামবাসীরা তাদের উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মালগাড়ির চালক সহ ৯ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন ।সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন আরো একজন। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত ১০. আহতের সংখ্যা প্রায় ৪৬ এর কাছাকাছি। এদের মধ্যে অনেকেরই আঘাত বেশ গুরুতর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতানুযায়ী যদি পাশের লাইন এ যদি কোনো ট্রেন এসে পড়তো সেই সময় তাহলে দুর্ঘটনার আকার আরো মারাত্মক হতে পারতো এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।রেল মন্ত্রকের মতানুসারে মালগাড়ির চালকের ‘গাফিলতি’ র জন্যই এই দুর্ঘটনা।সিগন্যাল না মেনে পূর্ণ গতিতে ট্রেন চালিয়ে দেওয়াতেই এই দুর্ঘটনা বলে তাদের দাবি।কিন্তু এক্ষেত্রেও এই দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন থাকছে —

●মালগাড়িকে কেন আলাদা লাইন এ রাখা হলো না ,যেখানে একই লাইন দু ‘টি ট্রেন ?

●কাঞ্চনজঙ্ঘা নিরাপদ দূরত্ত্বে পৌঁছাবার আগেই কি করে মালগাড়ির চালক মেমো পেলেন?

●দুটি ট্রেনকেই যদি ঘন্টায় সর্বোচ্ছ ১৫ কিমি গতিবেগ নির্ধারিত মেমো দেওয়া হয় তবে মালগাড়িটির গতিবেগ বেশি ছিল কেন এবং কি করে ? 

এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা হল বন্দে ভারত এর জাকজমকপূর্ণ উদ্বোধন তথা প্রচার – প্রসারের ব্যাপারে রেল মন্ত্রক যতটা আগ্রহী ও উৎসাহী , রেল সুরক্ষা জনিত ক্ষেত্রে তথা অন্যান্য ট্রেনগুলির পর্যবেক্ষনের ব্যাপারে কি তারা ততটাই উদাসীন ?এই দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দেয় গতবছর এই জুন মাসেই ওড়িশার বাহানাগায় ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর সেই রেল দুর্ঘটনার কথা যেখানে ২৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।বাহানাগাতে ট্রেন দুর্ঘটনায় চেন্নাইগামী শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করোমন্ডেল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি পণ্য ট্রেন জড়িত ছিল। সেই সময় ও রেল মন্ত্রী ছিলেন ২০২৪ লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে পুনরায় এই দপ্তরে মন্ত্রিত্ব পাওয়া অশ্বিনী বৈষ্ণবই । কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন ” যে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটুক ,তা যাতে আর ভবিষ্যতে না ঘটে , সেটা দেখা হবে। ” বৈষ্ণবের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, যিনি পূর্বতন ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন ,বলেছেন ” রেলের গাফিলতি ও উদাসীনতায় এই অবস্থা হয়েছে। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *