যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ব্যুরো :
কলকাতা ,১১ ডিসেম্বর: বর্তমানে দূষণটাই যেন সবচেয়ে বড় রোগ। জল-স্থল- বায়ু তিন জায়গাতেই এর প্রকোপ। এর মধ্যে সবচেয়ে যে দূষণটি মানুষকে অধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তাহলে বায়ুদূষণ। ২০২৫ বর্তমান হাইটেক যুগের দাঁড়িয়েও সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতি, উন্নতির ছোঁয়া লাগলেও দূষণে যেন কোনও উন্নতির ছোঁয়া নেই। দীপাবলির পর দূষণের জন্য শিরোনামে চলে যায় দেশের রাজধানী দিল্লি। ধোঁয়াতে ঢাকা রাজধানী পরিণত হয় মৃত্যপুরীতে। তবে এই বায়ুদূষণ শুধু দিল্লি তেই নয় সারা বছর সমগ্র দেশে এর কারনে হারাচ্ছে একাধিক প্রাণ। বিশ্বের বহু গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে দ্রুত।

গত ডিসেম্বরে , প্রকাশিত ল্যানসেটের একটি গবেষণা দরুন জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বাতাসে থাকার কারণে ভারতে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লক্ষ বা তার বেশি মৃত্যু হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হলো PM2.5 (কিভাবে শ্বাস – প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য বায়ু দূষণকারী পদার্থ) পদার্থটি সূক্ষ্মকোণা হলেও শরীরে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করে। কী এই PM2.5 ? PM2.5 হলো একটি গুরুতর বায়ু দূষণকারী পদার্থ যার মধ্যে রয়েছে 2.5 মাইক্রোমিটার বা তার চেয়ে ছোট ব্যাসের সূক্ষ্মশ্বাস-প্রশ্বাস যোগ্য কণা। যা মানুষের চুলের চেয়েও অনেক সূক্ষ্ম। এটি যানবাহনের নির্গমন, শিল্প নির্গমন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো উৎস থেকে আসে। যেটি বৃহৎ আকারে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে , এগুলি ফুসফুস এবং রক্ত প্রবাহের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। যার ফলস্বরূপ শ্বাসযন্ত্র এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও অন্য একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দিল্লিতে এই বায়ুদূষণই সবচেয়ে বড় মৃত্যুর কারণ ছিল । প্রায় ১৫ শতাংশ মৃত্যু সেই বছর ঘটেছিল এই বায়ুদূষণের জন্যই। শীতের সময় দিল্লি, এনসিআর – এ দূষণ এত অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে AQI প্রায়ই ৮০০ ছাড়িয়ে যায় , যা WHO (World Health Organization) -এর নিরাপদ মানের চেয়ে বহুগুণ বেশি। দেশে খুব কমই শহর আছে যেখানে সারা বছরে কোনও একদিন হয়তো পরিষ্কার বাতাস পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন দূষণের মধ্যে থাকা এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অসাস্থ্যকর দিক। এই দূষণকে ঠেকাতে সরকার ২০১৯ সালে NPCCHH (National Programme on Climate Change and Human Health) নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেন। সেই কর্মসূচিতে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এই বিষয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা বানাতে সাহায্য করা হয়েছে।
বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগ যাতে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে পারে সেই জন্য আবহাওয়া দপ্তর বায়ুমানের আগাম তথ্য নিয়মিত পাঠায়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, নভেম্বর মাসে ভয়াবহ দূষণের কারণে হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যার ওষুধ বিক্রি তিন বছরে পৌঁছেছে সর্বোচ্চ জায়গায়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সব ওষুধের মধ্যে ৮ শতাংশই শ্বাসকষ্টের ওষুধ। যা ইঙ্গিত দেয় যে বায়ুদূষণ কি পরিমান প্রভাব ফেলছে বর্তমানে জনজীবনে।●