
তিস্তা মন্ডল এর প্রতিবেদন
চলে গেলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।রাজ্যবাসী হলেন বুদ্ধ হারা। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছিলেন,,, ছিল অন্যান্য উপসর্গও। অবশেষে সব যুদ্ধের অবসান। মৃত্যু কালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর । শেষ হয়ে গেল এক বর্ণময় উত্থান পতন পূর্ণ এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের। রেখে গেলেন স্ত্রী মীরা ও একমাত্র পুত্র সুচেতনকে।
বুদ্ধদেবের জন্ম ১৯৪৪ এর পয়লা মার্চ।কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় সান্মানিক স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে করেছিলেন শিক্ষকতাও। কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র যুব রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ ছিল তার। ১৯৭৭ এ কাশিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি।কিন্তু 1982 তেই ছন্দপতন। এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রফুল্ল ঘোষ এর কাছে পরাজিত হন তিনি। এরপর ১৯৮৭ তে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে পুনরায় জয়ী হন তিনি। একটানা পাঁচবার এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি।অতঃপর ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের মনীশ গুপ্তের কাছে তিনি পরাজিত হন এবং সেই সঙ্গে ঘটে রাজ্যে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম জামানার অবসান। প্রশাসনিক জীবনে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন সম্পর্কে তাঁর কাকা।বরাবরই প্রচার-বিমুখ বুদ্ধর নির্জনতা নিবিড় অন্তরালে থেকে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা ছিল একান্ত প্রিয়। রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের পর তীব্র অসুস্থতা জনিত কারণেও তিনি ছিলেন লোক চক্ষুর অন্তরালেই। তবে সর্বদাই ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন। প্রিয় দল সিপিআইএমের তরুণ প্রজন্মের কাছেও ছিলেন ভীষণ প্রিয়।২০১১ পরবর্তী রাজনৈতিক তথা নির্বাচনী প্রচারে তিনি সশরীরে উপস্থিত না থাকতে পারলেও ছিলেন ভীষণভাবেই উপস্থিত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন ঘনিষ্ঠ পার্টি দরদী, বিশ্বাসি ছিলেন একেবারে সাদামাটা জীবন যাপনে।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউর তাঁর সেই বয়সের ভারে দীর্ণ দুই কামরার অতি সাধারণ ফ্ল্যাটেই কাটিয়ে গেছেন।সঙ্গী ছিল চে গুয়েভারা , গার্সিয়া মার্কেজ , সুকান্ত ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য বই।প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কখনোই সেভাবে সরকারি সাহায্যও তিনি নেননি। ছিলেন প্রকৃত অর্থে অন্তরালেই।নিজের ঘরে নিভৃতে দিন যাপন করাকে এক ধরণের স্বাধীনতা বলেই মনে করতেন তিনি।
অবশেষে দিন হল অবসান।বামেরা হারালো এক সুযোগ্য রাজনৈতিক অভিভাবককে। রাজ্য তথা দেশবাসী হারালো এক প্রকৃত সজ্জন বিদ্বান আদ্যন্ত সংস্কৃতি প্রেমী খাঁটি মানুষকে।