যুগবীক্ষণ নিউজ ব্যুরো (Dial- 7604097600 ; Whatsap- 7365021506 )

কলকাতা , ২০ জানুয়ারী :
আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৯ আগস্ট তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৩ আগস্ট সিবিআই কে তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এরপর সেই মতো তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ঘটনার গতি প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু করেন এবং বিভিন্ন তথ্য আদালতের সামনে পেশ করেন, যদিও বা এই নির্মম ঘটনা কে কেন্দ্র করে এর তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন সাধারণ জনগণ। এরপর দীর্ঘ ১৬২ দিন পর তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ – খুনের মামলার রায় দেন শিয়ালদা আদালত। সিবিআই এর জমা দেওয়া চার্জশিট এর ভিত্তিতে বিচারপতি অনির্বাণ দাস সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন। এই মামলার সাজা ঘোষণার কথা ছিল আজ ।
পূর্বেই কোর্ট থেকে জানানো হয়েছিল যে, সঞ্জয়ের হয় ফাঁসি নয়তো যাবজ্জীবন সাজা হবে।আজ সাজা ঘোষণার সময় বিচারক বলেন এই ঘটনার মামলা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। তাই শেষ পর্যন্ত আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা মিলল সঞ্জয়ের।এর সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। সেই সঙ্গে আদালত রাজ্য সরকারকে মৃতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণার পরই নির্যাতিতার মা-বাবা এজলাসে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না, আমরা বিচার চাই।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ইতিপূর্বেই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল এবং সঞ্চয়ের ফাঁসি হওয়া উচিত বলেও সাওয়াল করেছিল আদালতে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, সঞ্জয় কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩ টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, ৬৪ নং ধারায়, মৃত্যুর জন্য দায়ী , ৬৬ নং ধারায় ধর্ষণের শাস্তি এবং ১০৩ নং ধারায় খুনের চার্চ গঠন করা হয়েছিল। তবে এদিন আদালতে পুনরায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সঞ্জয়। সে জানান,” আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে ।আমি কিছু করিনি।” এর পাল্টা জবাবে বিচারক অনির্বাণ দাস বলেন,” সিবিআই যা প্রমাণ দিয়েছে তাতে আপনিই দোষী। শাস্তি পেতেই হবে।” অপরদিকে ফের সঞ্জয় জানান, “আমার কথা শুনুন প্লিজ । আমি কিছু করিনি। আমাকে আই পি এস রা যা বলেছেন, তাই বলেছি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে। আমি ধর্ষণ করলে সেটা ছিড়লো না কেন?”প্রসঙ্গত বিভিন্নভাবে এর আগেও আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সঞ্জয়।
প্রসঙ্গত গত ৯ আগস্ট আর জি করে ঘটা তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্য তথা দেশকে প্রবল প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হতে দেখা গেছে যা নজিরবিহীন বলা যায় । এই নৃশংস ঘটনা কে কেন্দ্র করে “রাত দখলের” মতন এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদ আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে গোটা রাজ্য তথা দেশ ।আর জি কর কাণ্ডে রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তাররাও নারী নিরাপত্তাহীনতা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ ও অনশন আন্দোলনে সামিল হয়। এই সকল প্রবল প্রতিবাদ আন্দোলনের একটাই ছিল স্বর — জাস্টিস ফর আর জি কর– বিচার চায় আর জি কর। আজ সেই দিন যে দিনটির জন্য এত প্রতিবাদ এত আন্দোলন।অবশেষে মিলল বিচার। কিন্তু ন্যায় বিচার মিলল কি ?
কোন পথে সাজা হল সঞ্জয় রায় এর :এক নজর
●আদালতের নির্দেশে ১৪ অগস্ট ,২৪ সিবিআই এর হাতে আরজিকর কাণ্ডের তদন্ত ভার
● ৪ নভেম্বর এই মামলায় আদালতে চার্জ গঠন করে সিবিআই।
● ১১ নভেম্বর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়
● ৯ জানুয়ারী ২৫ তা শেষ হয়
●১৮ জানুয়ারী সেই মামলায় রায় ঘোষণা করে শিয়ালদা আদালত ৷ দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয় রায়কে।
●২০ জানুয়ারী সেই মামলায় সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণা
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , রায়দানের পর মৃতার বাবা বলেন ‘বিচার পাইনি’ । অপরদিকে মৃতার মা-র বক্তব্য বিচারক বললেন এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম মামলা নয়। আমি মনে করি এটা বিরলতম থেকে বিরল। তাই এটা সিবিআইয়ের ব্যর্থতা। সঞ্জয় রায় এক এই ঘটনা ঘটাতে পারে না। আদালতের এই রায় কে কেন্দ্র করে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রাজ্যের শাসক দল ও বিরোধীরাও সরব হয়েছেন। জেলা সফরে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সাজা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, “আমি তো প্রথমেই ফাঁসির দাবি তুলে রাস্তায় নেমেছিলাম। সবাই নেমেছিল। আগের কয়েকটা ধর্ষণ – খুন মামলায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড শুনিয়েছে আদালত। এটা এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা ফাঁসি হলে অন্তত মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। … “
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, আরজিকর মামলায় মৃত্যুদণ্ড চেয়ে এবার হাইকোর্টে যাবেন ৷তিনি লেখেন,’ আরজি করে জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় আজকের রায়ে বলা হল এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয় ৷ আমি সত্যিই হতবাক । ‘ঘনিষ্ঠমহলে আক্ষেপ অভিষেকের “সমাজে ধর্ষকদের কোনও জায়গা নেই। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ যদি তার বিরুদ্ধে যায় ফাঁসিই একমাত্র পথ। করদাতাদের টাকা নষ্ট করে কাউকে জেলে রাখার কোনও অর্থ হয় না। সঞ্জয়ের মতো ধর্ষকের জন্য গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা খরচ করা অর্থহীন। এদের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিৎ।”রাজ্যের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপির পক্ষ থেকে এই সাজাকে ‘ন্যায়বিচারের প্রতারণা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।