তিস্তা মন্ডল ( যুগবীক্ষণ ডিজিটাল ডেস্ক , 5.10 am)

কলকাতা , ২১ ফেব্রুয়ারি :
প্রতিবারের ন্যায় এবছরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে যথাযথ বিনম্র আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশপ্রিয় পার্কে অমর একুশের শহিদ বেদি তৈরি করেন । সেখানেই রাজ্য সরকার প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকে । মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সেখানে উপস্থিত থাকেন বাংলার বিশিষ্ট গুণীজনরা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না।তবে এবছর মূলত দুটি কারণে পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল ম্রিয়মান।একদিকে বাংলা ভাষা আন্দোলন পীঠস্থান বাংলাদেশে তুমুল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্যদিকে বাংলা ভাষার অন্যতম পথিকৃৎ সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সদ্য প্রয়াণ।
ভাষা শহিদের মূল স্থান বাংলাদেশে এবছর ভাষা দিবস কোন ক্রমে অতি সংক্ষেপে পালিত হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি গভীর সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে এবছর বাংলায় ভালোভাবেই উদযাপন করা হল ভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঠিক আগেই প্রয়াত হয়েছেন শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাই এবারের ভাষা দিবস তাঁকেই উৎসর্গ করল রাজ্য সরকার।তিনি ইহলোকে না থাকলেও আসলে এদিনের অনুষ্ঠান হয়ে রইল ‘প্রতুলময়’। মঞ্চে রাখা প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পীর ছবিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ । এরপর রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গেয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপরই গাওয়া হল প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গান ‘বাংলায় গান গাই’।এদিনের অনুষ্ঠানে জয় গোস্বামী শ্রদ্ধা জানালেন কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর ‘বাংলা’ কবিতাটি পাঠ করে। কবি শ্রীজাত প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর নতুন কবিতা পাঠ করেন ।
প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা দিবসের মঞ্চে সামনের সারিতেই থাকতেন সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় ৷ এবার তিনি নেই। তাঁর ‘বাংলায় গান গাই’ গানটি ছাড়া এই অনুষ্ঠান যেন অসম্পূর্ণ ৷তবে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদ্য প্রয়াত সংগীতকারের স্ত্রী সর্বানী মুখোপাধ্যায়। মঞ্চে তাঁকে পরম মমতায় আগলে নিজের পাশে বসান মুখ্যমন্ত্রী।এদিনের এই অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতুল স্মরণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন ,বলেন, “যেখানেই থাকুন প্রতুলদা, ভালো থাকুন ৷ প্রতুলদা তো চলে গেলেন, সঙ্গে আমি ‘বাংলায় গান গাই’ গানটাও নিয়ে চলে গেলেন।তবে এই দিনটা আমরা পালন করব না, এটা হতে পারে না ৷ কোনও দেশ সম্পর্কে আমাদের কোনও কথা বলা উচিত নয় ৷ এই কারণে আমরা আমাদের দেশ সম্পর্কে বলব ৷ বাংলার মাটি সোনার মাটি ৷ বাংলা ভাষা কারও একার নয় ৷ সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চম ৷ এশিয়ায় বাংলা দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা ৷ বাংলা ভাষার গুরুত্ব চিরকাল ছিল, আছে এবং থাকবে ৷”
রাজ্য তথা দেশ ব্যাপী শান্তির বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রী পাঠ করেন একটি কবিতাও। প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাতে দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্স ডাউন প্লেস-এর নাম ‘প্রতুল মুখোপাধ্যায় সরণি’ নামকরণের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী এবং মঞ্চ থেকেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এই নাম বদলের প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন তিনি ৷
এদিনের এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মহানাগরিক ববি হাকিম , রাজ্যসরকারের ভিসিট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায় ,রাসবিহারী কেন্দ্রের বিধায়ক দেবাশীষ কুমার ,কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরমাতা কাজরী বন্দোপাধ্যায় , সাহিত্যিক আবুল বাসার, কবি জয় গোস্বামী , চিত্রকর তথা প্রাক্তন সাংসদ যোগেন চৌধুরী, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়,কবি সুবোধ সরকার সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন লোপামুদ্রা মিত্র, বাবুল সুপ্রিয়, ইমন চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন, রুপঙ্কর বাগচী সহ বিশিষ্ট শিল্পীরা।তবে এবছর প্রতুল হীন দেশপ্রিয় পার্কের ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে শূন্যতা ছিল বৈকি ৷