শীতকালে ঠোঁট , গোড়ালি , ত্বক ফেটে চৌচির ? জানেন কি আপনার কোন ভিটামিনের অভাব ?

যুগবীক্ষণ ডিজিটাল ডেস্ক (Help line : 7604097600 : Whatsap : 7365021506)

শীতকাল মানেই শুষ্কতার মরশুম শুরু। একই সঙ্গে চামড়ায় টান ধরা , ঠোঁট ফাটা , পায়ের গোড়ালি ফাটার মতন সমস্যার ঝক্বি পোহানোর দিনও শুরু হয় বলা যায়।এই সমস্যায় যথেষ্ট বেগ পেতেহয় অনেককেই ।  কিন্তু কেন এই সমস্যা ? বিভিন্ন কারণেই এই সমস্যাগুলি দেখা দেয় যার মধ্যে অন্যতম হল ভিটামিনের অভাব   ।ভিটামিনের ঘাটতি হলে তা আপনার শরীরে শুধু নয় ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপরও যথেষ্ট  প্রভাব ফেলে । ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। ভিটামিনের ঘাটতি ত্বকে শুষ্কতা, নিস্তেজ ভাব,  এমনকি আরও কিছু গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে।  মূলত: শরীরে কোন  ভিটামিনের অভাবে এইসব সমস্যাগুলি দেখা যায় ?  অধিকাংশরাই  হয়ত এই বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন   । চলুন  তাহলে জেনে  নেওয়া যাক —  

গোড়ালি ফাঁটা : শীতকালের একটি  সাধারন সমস্যা যা নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু অনেকের আবার শুধুমাত্র শীতকালেই নয় সারা বছরও গোড়ালি ফাঁটার মতন সমস্যা থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন ফাটে গোড়ালি? মূলত আমাদের শরীরে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন  বি ৩ এর অভাবে এই সমস্যা দেখা যায়

ঠোঁট ফাঁটা : শীতকালে শুষ্কতা এবং ত্বক ফাঁটার সমস্যা গুলির মধ্যে অন্যতম হল ঠোঁট ফাঁটা। অনেকের শুধুমাত্র শীতকালীই নয় সারা বছর ধরেই ঠোঁট ফাঁটার সমস্যা থাকে। এই সমস্যাটি বড়ই অস্বস্তিকর। অনেক সময় ফাটা ঠোঁটে ব্যাথাও থাকে যথেষ্ট। মূলত ভিটামিন বি 2 এর অভাবে ঠোঁট ফাঁটার মতন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ত্বকের শুষ্কতা, নিস্তেজ ভাব : ভিটামিন ই এর অভাব হল নিস্তেজ এবং শুষ্ক ত্বকের অন্যতম কারণ  । ভিটামিন ই হলো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে এবং সুস্থ ত্বক বজায় রাখতে সহায়তা করে। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ই এর অভাব হলে ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে যায়  । এই ভিটামিনের ঘাটতির ফলে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, যার ফলে ত্বক বিবর্ণ হয়ে যায়।

ত্বকের কোষের বৃদ্ধি এবং ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ডি। সমীক্ষায় দেখা যায়  যে, ভিটামিন ডি এর অভাবে ত্বকে একজিমা এবং সোরিয়াসিস হতে পারে যা ত্বককে  শুষ্ক করে তোলে ।

ভিটামিন সি হল একটি অত্যন্ত্  গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় ত্বক-প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এটি ত্বকের সংস্পর্শে আসা দূষিত পদার্থ নির্মূল করতে  সাহায্য করে। এই ভিটামিন ত্বকের আদ্রতা ও উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে  প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হল কোলাজেন। ভিটামিন সি এই কোলাজেন উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা  পালন করে।

শুষ্ক ও ফেটে যাওয়া ত্বক ও বলিরেখার অন্যতম কারণ  ভিটামিন বি এর অভাব।   ভিটামিন বি-তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান  যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়।

শুস্ক এবং নিষ্প্রভ ত্বকের সমস্যার  বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য।এর  পাশাপাশি ত্বকের কোষ তৈরি ও মেরামতের জন্যও পর্যাপ্ত ভিটামিন এ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।

ঘরোয়া , প্রাকৃতিক উপায়ে অব্যর্থ প্রতিকার :

এই ভিটামিনের অভাব দূর করতে অধিকাংশরাই ডাক্তারের পরামর্শে বা নিজেরাই বাজার চলতি বিভিন্ন নামী দামি ব্রান্ডের ভিটামিন ক্যাপসুল , ট্যাবলেট এবং টনিক খেয়ে থাকেন।  কিন্তু বলা বাহুল্য দীর্ঘদিন এই সব ওষুধ খেলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত।তাই সবচেয়ে উপযোগী এবং উপকারী উপায় হলো হলো প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে এই ভিটামিনের অভাব জনিত সমস্যা দূর করা। কিন্তু জানেন কি যে বেশ কিছু অতি সাধারণ  প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমেই শরীরের এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব ! চলুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক এই সব উপাদানগুলি–

আমলকি: আমলকি আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি ফল এবং এটি শীতের মরশুমেই সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক মহাঔষধি হিসেবে  ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ফল , সহজলভ্য এবং উপকারিতা বিশেষে এই আমলকির রয়েছে জুড়ি মেলাভার। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি উপস্থিত থাকে আমলকিতে , তাই প্রাকৃতিক উপায় আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর জোগান দিতে এবং ত্বককে ভাল রাখতে খুব ভালো উপকারিতা দিতে পারে এই ফল । একই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও হজম প্রক্রিয়ার কে সঠিক রাখতে অত্যন্ত ভালো ফল এই আমলকি।

কমলা লেবু: শীতের মরশুমে পাওয়া যায় আরোও একটি পরিচিত এবং সহজলভ্য ফল হল এই কমলালেবু বা কমলা। কমলা লেবুতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আমাদের এই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের সাথে সাথে ত্বককে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

পেয়ারা: প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে ভিটামিন সি এর জোগান দিতে পেয়ারা হল অন্যতম একটি ফল। এই ফলটি সারাবছরই কমবেশি আমরা পেয়ে থাকি। এই ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি উপস্থিত থাকে।

পালংশাক: বাজারে গেলে সবসময় না পাওয়া গেলেও শীতের মরশুমে প্রায়ই দেখা মেলে এই পালংশাকের। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই উপস্থিত থাকে , যা আমাদের ত্বক , চুল এবং পেশিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণের জন্য এটি একটি ভালো পদ্ধতি।

লেটুসপাতা: লেটুসপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন আছে। সোডিয়াম, পটাসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। 

আমন্ড: আমন্ড হলো এক ধরনের বাদাম। এই বাদামে  ভিটামিন ই ভরপুর থাকে , তাই প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ভিটামিন ই এর যোগান দিতে এটি রাখা যেতে পারে খাদ্যতালিকায়।

বাদাম: বাদামেও ভিটামিন-ই উপস্থিত থাকে যা আমাদের শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে থাকে।

খেজুর : পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ ও বি, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার এবং আয়রন।

কলা: কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬,ভিটামিন সি ,ভিটামিন এ,আয়রন,অ্যামিনো অ্যাসিড টাইরোসিন ও পটাসিয়াম।

দুধ : দুধে রয়েছে প্রচুর মাত্রায়  ক্যালসিয়াম,রাইবোফ্লাভিন,পটাসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম,প্রোটিন ,ভিটামিন এ, বি ,ভিটামিন ডি এবং  আয়রন

পনির : পনির এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর মাত্রায়  প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট , ক্যালসিয়াম,  ভিটামিন ডি ,আয়রন, এবং ম্যাগনেসিয়াম  ।

স্কোয়াশ: স্কোয়াশ অনেকেই হয়তো চেনেন না। চিনলেও খেতে অনীহা প্রকাশ করেন ।কিন্তু স্কোয়াশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং  বিটাক্যারোটিন। এটি খেতে অনেকটাই কাঁচা পেঁপের মতোই। রান্না করার পদ্ধতিও প্রায় এক।

ব্রকলি :ব্রকলি হল ফুলকপির মতো দেখতে একটি সবুজ সবজি যা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটা খাবার। এটি ব্রাসিকা পরিবারের অন্তর্গত। ফুলকপি, বাঁধাকপি এরা সবাই একই শ্রেণীর। ব্রকলিকে কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ ও সি

ডিম: ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন বি 12 । ডিমের  মধ্যে রয়েছে সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, বি৬, বি১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিঙ্ক, আয়রন এবং কপার।

স্যালমন  মাছ : এতে রয়েছে ওমেগা-৩,ভিটামিন এ ,ওমেগা -৬  ।এটিতে রয়েছে  সেলেনিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, পটাসিয়াম এবং বি ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি ৬, বি ১২  এবং রাইবোফ্লাভিন সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ ।

মুরগির মেটে : মুরগির মেটেতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, আয়রন, ক্যালশিয়াম এবং ফাইবার ।  

সুন্দর পেলব কোমল উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই সম্পদ।  তাই  শুধুমাত্র সুস্বাস্থের জন্যই নয় সুন্দর ত্বকের জন্যও  সর্বোপরি প্রয়োজন পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। তাই আমাদের সকলেরই নিজেদের শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার  তাগিদে খাদ্যাভাসে আনতে হবে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত খুব সাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান থেকেই পাওয়া সম্ভব  বৈকি !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *