Last update : 3.39pm
যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ডেস্ক (Dial : 7604097600)
●Reported by : Tista Mondal
●Digital Arrangement : Laboni Dey
কলকাতা,৩০ আগস্ট: বাড়তি চাপে কি ন্যুব্জ পুরাতন মেট্রোপথ?পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঠিকঠাক ঘোষণা হয় না। সময়ে মেট্রো চলে না। এসি খারাপ থাকে অনেক রেকে। দরজা বন্ধ হয় না।সম্প্রতি যাত্রীদের এমন হাজারো অভিযোগ সবচেয়ে পুরোনো ব্লু লাইনের বিরুদ্ধে !
কলকাতার প্রাচীনতম মেট্রোপথ ‘ব্লু লাইন’ .দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ৩২.১৩ কিলোমিটার লম্বা এই পথেই কিছু দিন আগে পর্যন্ত শুধু চলত মেট্রো। তার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এখন সেখানে শাখানদীর মতো মিশেছে গ্রিন, ইয়েলো এবং অরেঞ্জ লাইন।সম্প্রতি নতুন তিন পথ চালু হওয়ার পর থেকে ব্লু লাইন যেন দুয়োরানি। অনেক বেশি ঝাঁ-চকচকে এবং মসৃণ যাতায়াত ইয়েলো লাইনে অর্থাৎ নোয়াপাড়া থেকে জয় হিন্দ বিমানবন্দর এবং গ্রিন লাইনে অর্থাৎ সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান। যাদেরকে বলা হচ্ছে ‘সুয়োরানি’! গত শুক্রবার গ্রিন লাইনের এসপ্ল্যানেড-শিয়ালদহ অংশ, ইয়েলো লাইন এবং অরেঞ্জ লাইনের হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত পথ উদ্বোধন করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সব পথ এসে যেহেতু কোথাও না কোথাও ব্লু লাইনে মিশেছে, তাই ভিড় বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রতি দিন গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ যাতায়াত করেছেন ব্লু লাইনে।

ব্লু লাইনের কবি সুভাষ স্টেশন বন্ধ রয়েছে বেশ কিছুদিন। না হলে এই লাইনে ভিড় আরও বাড়ত। এখন ব্লু লাইনে মেট্রো দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত চলছে। এটাও আরেকটা সমস্যা এবং অনেক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ,শহিদ ক্ষুদিরামে ডাউন মেট্রোর রেককে আপ লাইনে নিয়ে আসার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে ফাঁকা রেক নিয়ে যেতে হচ্ছে কবি সুভাষ পর্যন্ত। সেখান থেকে ‘টার্ন আউট’ করে আবার প্রান্তিক স্টেশন শহিদ ক্ষুদিরাম।বলা বাহুল্য তাতে ঘেঁটে গিয়েছে সময়সূচি। এর পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটি মেট্রো শহিদ ক্ষুদিরাম যাবে। পরেরটি মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে ফিরে যাবে দক্ষিণেশ্বর। কিন্তু এর পরেও সময়ানুগ পরিষেবা দিতে পারেনি মেট্রো।
এ সবের সঙ্গে জুড়েছে নতুন মেট্রোর চাপ। এসপ্ল্যানেড এবং শিয়ালদহ জুড়ে যাওয়ার পর সেই দিন সন্ধ্যা থেকেই গ্রিন লাইনে পুরোপথে মেট্রো চলাচল শুরু হয়। প্রচুর যাত্রী হাওড়া থেকে এসে এসপ্ল্যানেডে নেমে ব্লু লাইনের মেট্রো ধরতে থাকেন। আবার সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ হয়েও প্রচুর মানুষ নামছেন এসপ্ল্যানেডে। গ্রিন লাইনের সেই ভিড় সামলানোর মতো পরিকাঠামো মেট্রোর ছিল নাবৈকি ।তার সঙ্গে গত সোমবার জুড়েছে বিমানবন্দর-নোয়াপাড়া। ফলে ব্লু লাইনে চাপ আরও বেড়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, পুরনো ব্লু লাইনই সামলাতে পারছিলেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর সফরের তোড়জোড় এবং নতুন দুই মেট্রোর পথে নজর দিতে গিয়ে ব্লু লাইনে কোনও নজর দিতে পারেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। নতুন যা রেক এসেছে, প্রায় সবই ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়েলো লাইনে। গ্রিন লাইনের মেট্রো ব্লু লাইনে চালানোর কোনও অবকাশ নেই।ফলে পূর্ব থেকে পশ্চিম , উত্তর থেকে দক্ষিণ– নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি চরমে। কখন যে মেট্রো বন্ধ হয়ে যাবে তার ঠিক নেই।
পরিষেবা বিভ্রাট নিয়ে মেট্রোর এক কর্তার সাফাই, ‘‘৪০ বছর ধরে ব্লু লাইন পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। গোটা দেশে আর কোথাও এমন নেই। এত দিন ধরে চললে কিছু সমস্যা তো থাকবেই। আমরা চেষ্টা করছি, সে সব সমস্যা কাটিয়ে ঠিকঠাক পরিষেবা দিতে। রবিবার শহিদ ক্ষুদিরামে একটা টার্ন আউট বসানো হবে। তার পর সমস্যা আর থাকবে না বলেই আশা করছি। এটা সাময়িক ব্যাপার। শীঘ্রই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’’ আয়ের দিক থেকে ব্লু লাইনই মেট্রোর লক্ষ্মী। সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি আয় হয়। দৈনিক প্রায় ১ কোটি টাকা।এবার পরিষেবা কবে সঠিক ও সময়ানুগ হয় সেটাই দেখার।