যুগবীক্ষণ ডিজিটাল ডেস্ক : বর্তমানে অধিকাংশের মধ্যেই যে সমস্যাটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তা হল, ফ্যাটি লিভার । প্রায় ঘরেই এই রোগে ভুক্তভোগীর এখন দেখা মেলে।সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ভারতে প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত । রেহাই নেই শিশুদেরও। এদেশে এই সমস্যার শিকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শিশু। সমগ্র বিশ্বে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ এই ফ্যাটি লিভার সমস্যা সম্মুখীন।
লিভার আমাদের শরীরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আমাদের খাদ্যদ্রব্য হজম প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে জরুরি । কিন্তু আমাদের রোজকারের কিছু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে এই লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয় । লিভারের চর্বি জমে বা ফ্যাট জমে তৈরি হয় ফ্যাটি লিভারের মতন সমস্যা। মূলত অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস এর কারণেই এই সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে– ১) অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার যা সাধারণত মাত্রাধিক মদ্যপানের ফলে হয়ে থাকে । ২) নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার যেটি লিভারে মাত্রাধিক চর্বি জমার ফলে হয়ে থাকে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক এই ফ্যাটি লিভার হয় কিভাবে– ১) মাত্রা ঠিক ওজন বৃদ্ধির কারণে লিভারের চর্বি জমার মতন সমস্যার সৃষ্টি হয়। ২) রক্তে শর্করার মাত্রা সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি হলে এই ফ্যাটি লিভারের মতন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। ৩) অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এই রোগের প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে অন্যতম। শর্করা বা ফ্যাট জাতীয় খাবার উচ্চমাত্রায় খেলে লিভারে চর্বি বা ফ্যাট জমার মতন সমস্যা দেখা যায়।
এই রোগের লক্ষণ কি? বা প্রাথমিকভাবে কিভাবে চিহ্নিত করা যাবে এই সমস্যা ? চলুন দেখেনি — মূলত এই রোগটি উপসর্গবিহীন।তবে ক্লান্তি, মানসিক বিভ্রান্তি, অলসতা,পেট ভার ,অ্যাসিডিটি এবং পেটের উপরে ডানদিকে অস্বস্তি ও কখনো ব্যাথা অনুভব করা এই রোগের লক্ষণ হতে পারে ।
এই সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করলে উপশম পাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ যেগুলো যথেষ্ট ভালো কাজ করে। রয়েছে কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধও। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে “প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর “.অর্থাৎ রোগ বাঁধিয়ে চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়ার থেকে ভালো রোগ প্রতিরোধ করা।তাই কিভাবে এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত্ জরুরি বৈকি।চলুন দেখে নেওয়া যাক — ১) এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সবচেয়ে ভালো উপায় নিয়মিত শরীর চর্চা অর্থাৎ , ব্যায়াম করা এবং সঠিক অনুপাতে শরীরের ওজন বজায় রাখা। যা আমাদের শরীরকে এই সমস্যার সাথে সাথে শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করবে। ২) স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য যেমন– শর্করার বা চর্বিযুক্ত খাবার মাত্রাধিক না খাওয়া । বাইরের ফাস্টফুড না খাওয়া। এবং এর পরিবর্তে সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে খাদ্য তালিকায় ফল, সব্জি ,ফাইবার জাতীয় খাদ্যগুলি খাওয়া। ৩) মাত্রাধিক অ্যালকোহল সেবন কম করা। কারণ অতিমাত্রায় অ্যালকোহল সেবন করলে ফ্যাটি লিভারের মতন সমস্যার সাথে সাথে জটিল রোগ ও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
শরীরকর সুস্থ রাখতে গেলে সর্বোপরি প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত জীবনধারণের। রোজকারের জীবন ধারায় ব্যায়াম, পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ ও কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘন্টা বিশ্রাম করা প্রয়োজন যা আমাদের কে এই সমস্যার থেকে রেহাই পাওয়ার সাথে শরীরকেও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।