
যুগবীক্ষণ ডিজিটাল ডেস্ক : আরজি করে ঘটা, নারকীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে উত্তাল গোটা রাজ্য। প্রত্যেকের একটাই দাবি আসল দোষী সামনে আসুক এবং তার যথাযথ শাস্তি হোক । এই প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যেই গত ১৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আরজিকর ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই। তারপর থেকেই আর জি কর কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বেআইনি ঘটনাগুলি একের পর এক উঠে আসতে থাকে জনসমক্ষে।
৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ছিল। এখনো পর্যন্ত তদন্তের গতিপ্রকৃতি কেমন ভাবে এগিয়েছে তা নিয়ে এদিন সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা করেন সিবিআই এর আইনজীবী তুষার মেহতা। এদিন আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নতুন ‘দিগনির্দেশ’ মিলেছে বলে সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়। এই তদন্তের অগ্রগতির সম্পর্কে একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন সিবিআই। এ সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন “মনে হচ্ছে তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর ফের শুনানি হবে। সিবিআই ফের তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেবে। এর মধ্যে কি হয় , দেখা যাক। সিবিআই কে কি পথ নিতে হবে তা আমরা বলে দিচ্ছি না। সিবিআই এই যে নতুন ‘দিগনির্দেশ’ পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখুক”। প্রধান বিচারপতি সহ আরো তিন বিচারপতির বেঞ্চে সিবিআই রিপোর্টটি খুঁটিয়ে দেখা হয়। সিবিআই রিপোর্টটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে তদন্তের বিষয় সম্পর্কে কিছু বলেননি বিচারপতিগণ।
দেশ জুড়ে একটাই স্বর : জাস্টিস ফর আর জি কর
সিবিআই এর তরফ থেকে আদালতকে জানানো হয় ঘটনাস্থল থেকে যে সমস্ত নমুনা গুলির সংগ্রহ করা হয়েছিল সেগুলো কলকাতা পুলিশ রাজ্যের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছিল। সিবিআই ঘটনার তদন্তের স্বচ্ছতার জন্য সেই নমুনা গুলি আবার দিল্লির এমস হাসপাতালে ও কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পুনরায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। শরীরের দুটি নমুনা সহ , দুটি বস্তু রয়েছে এর মধ্যে। এক্ষেত্রে কারা আগে এই ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করেছিল সেই বিষয়টি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন সিবিআই তরফের আইনজীবী তুষার মেহতা। প্রথম থেকেই আরজি করে ঘটা মহিলা চিকিৎসককে খুন করে ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে উঠতে থাকে একাধিক প্রশ্ন সামনে আসে বিভিন্ন অসঙ্গতি। সেই প্রশ্নগুলি এদিন মান্যতা পেল দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। মৃতার দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানোর সময় যে নথি বা চালান সঙ্গে থাকে তা পাওয়া যায়নি। মূলত এই নথিপত্রের মধ্যেই উল্লেখ করা থাকে মৃতার পোশাক বা অন্য কোন কোন জিনিস গুলি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সিবিআই জানান কলকাতা পুলিশ তাদের যে নথিগুলি দিয়েছিলেন তার কোনোটির মধ্যেই মেলেনি এই ময়না তদন্তের চালান বা নথি। এদিন আদালতে প্রশ্ন ওঠে ঘটনার রাতের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েও। এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন সমস্ত নথি এবং প্রিয়জনীয় সিসিটিভি ফুটেজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে সিবিআই কে।
এক নজরে আর জি কর শুনানি :
প্রধান বিচারপতি বি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের প্রশ্নবান : যে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে–
১) ময়না তদন্তের জন্য অতি প্রয়োজনীয় চালান ছাড়াই কিভাবে হল ময়নাতদন্ত?
২) অভিযুক্তের সেমিনার রুমে ঢোকা এবং বার হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে, ভোর সাড়ে ৪ টের পরে সেমিনার রুমে কারা ঢুকেছে সারাদিনের সেই ফুটেজ ও থাকার কথা। তা কি সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে?
৩) কোন সময় ঘটনা স্থলে তল্লাশি জিনিসপত্র আটক করা হয়? এবং সেই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ কি? কলকাতা পুলিশ দিয়েছে সিবিআই কে?
৪) দেহ উদ্ধারের ১৪ ঘণ্টা পর এফ আই আর করা হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা কখন থানায় দায়ের করা হয়েছিল?
৫) আরজি কর থেকে অধ্যক্ষের বাড়ির দূরত্ব কত?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলী :
১) ডাক্তারদের মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টার মধ্যে কাজে ফিরতে হবে।
২) আগামী শুনানির আগে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা করবে সিবিআই।
৩) রাজ্যকে সোমবার বিকেলের মধ্যে সিআইএসএফের তিন কনস্টেবলের থাকার জায়গা রাত ৯ টার মধ্যে অন্য নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।