নাবালিকা খুনে অগ্নিগর্ভ জয়নগর : জ্বালিয়ে দেওয়া হল পুলিশ ফাঁড়ি , পুলিশের গাড়ি ,বিক্ষুব্ধ জনতার মারে জখম ১২ পুলিশকর্মী

যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ব্যুরো : আর জি কর  হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের  নৃশংস কাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তির দাবীতে যখন গোটা রাজ্য আন্দোলনে তোলপাড়   ঠিক সেই আবহেই আবারও ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ ! এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ।এবার পৈশাচিক ঘটনার বলি ন’বছরের শিশু।এই ঘটনাকে  ঘিরে শনিবার সারাদিন  অগ্নিগর্ভ থাকল জয়নগরের মহিষমারি অঞ্চল। পুলিশী  নিষ্ক্রিয়তা ও কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগে  এদিন সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখান  মহিষমারির বাসিন্দারা।পুলিশের গাড়ি এবং  পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও  জ্বালিয়ে  বিক্ষোভ চলে ।১২ জন পুলিশকর্মী গ্রামবাসীদের বেদম মারে জখম হন । বারুইপুরের এসডিপিও ও বিক্ষুব্ধ জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়েন  । পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে । ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস।

মহিষমারি এলাকার একটি পুকুর থেকে শুক্রবার রাতে  উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ।বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে এই পুকুর।  পারিবারিক সূত্র মারফত জানানো হয়েছে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া এই নাবালিকা দুপুরে টিউশন পড়তে গিয়েছিল কিন্তু  আর বাড়ি ফেরেনি।এদিকে পরিবারের লোকেরা  মেয়েটিকে খুঁজে না পেয়ে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে যান ।কিন্তু  অভিযোগ, তাঁদের কথায় প্রথমে গুরুত্ব না দিয়ে জয়নগর থানায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়। পুলিশ প্রথমেই তৎপর হলে নাবালিকাকে হয়তো বাঁচানো যেত পরিবারের অভিযোগ ।সেই অভিযোগে দেহ উদ্ধারের পর শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়।কুলতলির তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল এলাকায় গিয়ে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন ।ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা তাঁকে তাড়া করেন । পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দক্ষিণ বারাসাত থেকে মহিষমারি যাওয়ার রাস্তাও অবরোধ করা হয়।

স্থানীয়রা ঝাঁটা, লাঠি, বাঁশ নিয়ে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতেও চড়াও হন ।ভাঙচুর চালানো হয়  থানার ভিতরে ঢুকে । পরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ফাঁড়ির বাইরে মোটরবাইক, সাইকেলেও । প্রাণভয়ে লুকিয়ে পড়তেও দেখা যায় পুলিশকর্মীদের।  বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসকেও বিক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা লাঠি হাতে তাড়া করেন । জয়নগর থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয় পরিস্থিতি সামাল দিতে । কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। পাল্টা ইটবৃষ্টি হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে।  ইট ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকেও। এর পরেই ঘটনাস্থলে যান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার, প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি আকাশ মাঘারিয়া, বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত

পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে  বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালির  বক্তব্য রাত   ৯ টা  নাগাদ মহিষমারি পুলিশ ক্যাম্পে এই ঘটনার খবর আসে এবং অবিলম্বে  তদন্ত  শুরু হয়   । অভিযোগ পাওয়ার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে।পুলিশ সুপারের দাবী  অনুযায়ী  সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে  গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করলেও খুনের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। কিন্তু ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।  শনিবার দুপুরেই ধৃতকে বারুইপুর আদালতে হাজির করানো হয় । পুলিশের আবেদন মেনে বিচারক ধৃতকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ।

 প্রসঙ্গত, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে  যে  পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে ,ছাড়া হবে না  কাউকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *