
যুগবীক্ষণ ডিজিটাল ডেস্ক (tistamondal4tista@gmail.com)
নাৎসিদের বিরুদ্ধে যে সাহসিকতা নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র সমাজ সেই সাহসকে স্মরণ করতে এবং উৎসাহ দানের জন্যই ১৭ নভেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক ছাত্র দিবস। সালটা ১৯৩৯ এর ২৪ শে অক্টোবর । চেকোশ্লোভাকিয়ার স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনের জন্য প্রাগের ছাত্ররা একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে যে বিক্ষোভটি ছিল মূলত: নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে। এই বিক্ষোভ চলাকালীন জন ওপলেটাল নামক এক মেডিকেলের ছাত্র গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে সেই ঘায়েলের জেরে ১১ নভেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর ১৫ নভেম্বর ওপলেটালের মৃতদেহটি নিয়ে মেরোভিয়ায় তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর এই শেষ যাত্রার মিছিলে শামিল হয় বহু ছাত্র যা পরবর্তীতে পরিণত হয়েছিল নাৎসি বিরোধী বিক্ষোভে।
নাৎসি অধিকর্তারা এই বিক্ষোভের প্রতিশোধ হিসেবে সমস্ত চেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ১২০০ জনেরও বেশি ছাত্রকে গ্রেফতার করেন এবং তাদেরকে বন্দী শিবিরে পাঠানো হয় । এরপর ১৭ নভেম্বর বিনা বিচারে নয় জন ছাত্রসহ অধ্যাপককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যে নয়জন ছাত্র সহ অধ্যাপককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তারা হলেন–Josef Matousek (ইতিহাসবিদ এবং সহযোগী অধ্যাপক),Jaroslav klima (আইনের ছাত্র এবং বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার চেক ছাত্রদের জাতীয় সমিতির চেয়ারম্যান),Josef Adamec (আইনের ছাত্র এবং বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার চেক ছাত্রদের জাতীয় সমিতির সচিব),Jan weinert (বোহেমিস্টিকস এবং জার্মানিস্টিকসের ছাত্র),Jan cerny (মেডিসিনের ছাত্র),Bedrich koulav (আইনের ছাত্র),Vaclav safranek (স্থাপত্যের ছাত্র),Marek Frauwirth(অর্থনীতির ছাত্র),Frantisek skorkovsky (আইনের ছাত্র এবং কনফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডেস এটুডিয়ান্টস ) ১৯৪১ সালের ১৭ নভেম্বর চেক ছাত্রদের সাহসিকতা এবং আত্ম বলিদান এর প্রতি সম্মান জানাতে আন্তর্জাতিক ছাত্র পরিষদ লন্ডনে একটি সভা অনুষ্ঠিত করে ,এবং ছাত্রদের সক্রিয়তা এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে এই দিনটি অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর দিনটিকে তাঁরা আন্তর্জাতিক ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
আন্তর্জাতিক ছাত্র দিবস এই দিনটি কেবলই একটি ঐতিহাসিক স্বরণ নয় বরং আমাদের সমাজ তথা জাতির মেরুদন্ড ছাত্র সমাজের প্রচেষ্টা ও লক্ষ্য অর্জন হিসেবেও বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে। এই দিনটি হল ছাত্র সমাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, স্বাধীনতা অর্জনের দিন কারণ , জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে শিক্ষা হল মৌলিক মানবাধিকার যা গ্রহণ করার অধিকার সকলের আছে। ঠিক একই সঙ্গে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী সমাজের বুকে গড়ে ওঠা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তথা ছাত্রসমাজকে মনে করিয়ে দেয় যে , তাদের সমাজের প্রতি রয়েছে কিছু কর্তব্য । সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দিকগুলিতে ন্যায্য পরিবর্তন ঘটাতে এবং এক সুন্দর সমাজ গঠনেরও দাবি রাখে এই দিনটি বর্তমান ছাত্র সমাজের কাছে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াকু সেই সকল ছাত্রদের সাহসিকতা ,সক্রিয়তা এবং সংহতির আহুতি প্রদান করে এই দিনটি।
১৭ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ছাত্র দিবস পালিত হয় , কিন্তু এর কিছু সামাজিক দিক ও আছে যা ছাএ সমাজেকে উৎসাহ প্রদান করে। ছাত্ররাই হল ভবিষ্যতের কান্ডারী, সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার। তাই সততার সাথে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে দৃঢ়তার সাথে সমাজের বুকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা , শিক্ষার উপর থাকা সকল রকম বৈষম্য এবং শোষণ মুক্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে গঠন করা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে সকলের যে স্বাধীনতা এবং অধিকার তা প্রতিষ্ঠা করাই তাদের কর্তব্য । শিক্ষার্থীরাই আমাদের দেশের সম্পদ একটি শিক্ষিত সমাজই গড়ে তুলতে পারে দুর্নীতিমুক্ত ,ন্যায়পরায়ণ দেশ তথা সমাজ। লিঙ্গ ভেদে, জাতি, বর্ণ ,নির্বিশেষে সকলেরই রয়েছে শিক্ষার অধিকার। ঠিক একইভাবে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীরই দেশ তথা সমাজের প্রতি কর্তব্য কখনোই ভুললে চলবে না।ছাত্র সমাজকেই সততার সাথে, ন্যায়ের সাথে সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে থাকা অন্যায় গুলিকে দমন করে এক সুন্দর সমাজ তথা দেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে বৈকি !