মাধ্যমিকে এবার ছেলেদের তুলনায় মেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা লক্ষাধিক বেশি : মমতার শিক্ষাঙ্গনমুখী প্রকল্পের সুফল বলেই মত প্রকাশ অধিকাংশের

কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারী : আবারও শিরোনামে মাধ্যমিক ,২০২৫ ! তবে এবার ভুল পরীক্ষার্থী , অসৎ উপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দেওয়া , ব্যাপক টোকাটুকি ইত্যাদির মতো নেতিবাচক কোনো কারণে নয়।এটি যথেষ্ট লক্ষ্যণীয় ও উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক বিষয়ই বটে ! এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রদের তুলনায় এক লক্ষেরও বেশী।বিগত প্রায় একদশক ধরেই এই ট্রেন্ড চলছে কিন্তু  এবছর ছাত্র – ছাত্রীদের  ফারাকটা যথেষ্ট চোখে পড়ার মতই। শিক্ষা জগতের অধিকাংশরা এটাকে  ‘নিউ নর্মাল’ই বলছেন । কিন্তু মাধ্যমিকে ছাত্রের সংখ্যা কেন কম  ?তারা  কি বেশি সংখ্যায় ‘স্কুলছুট’ ?যদি তাই হয় তা হলে তারা যাচ্ছে কোথায়?   না কি ছাত্রীদের স্কুলে ভর্তি  বেড়েছে?সেক্ষেত্রেও যদি তাই হয় সেটাই বা কেন ?

মাধ্যমিকে ছাত্রীদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন ব্যাখ্যা থাকলেও অধিকাংশদের মতেই  ছাত্রীদের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনমুখী করতে রাজ্য সরকারের যে বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে,সেগুলোই এর মূল কারণ।রাজ্যে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এর মস্তিস্কপ্রসূত  ‘কন্যাশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’ বা ‘সবুজ সাথী’র মতো ছাত্রবন্ধু প্রকল্পগুলি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ ২২ ফেব্রুয়ারি ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে  । মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬৯০ জন। তার মধ্যে ছাত্র ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৮২ জন এবং ছাত্রী ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯০৮ জন।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য  দু’ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে  এই পরিসংখ্যানকে ।একদিকের  বক্তব্য,বিশেষত গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক  স্কুলছুট এর কারণে ছাত্রের সংখ্যা কমেছে। । তারা অভাবের তাড়নায়  পড়াশোনা ছেড়ে  কাজ করতে চলে যাচ্ছে। আরেকদিকের  বক্তব্য, ছাত্রের সংখ্যা কমেনি বরং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির প্রভাবে সংখ্যা বেড়েছে। মিড্ ডে মিল  ব্যবস্থাও অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হয়।  যদিও মিড্ ডে মিল এর পুষ্টিগত গুছাত্রীর ন্ ও খাদ্যদ্রব্যের ম্যান নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

শিক্ষা দফতর সূত্রে পাওয়া  তথ্য বলছে, ২০১১ সাল থেকেই মাধ্যমিকে এই ছাত্রীসংখ্যার আধিক্য লক্ষ করা যায় । উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার।তৃণমূল সেই  বছর মে মাসে ক্ষমতায় আসে । সেই  বছরেও  মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ছাত্রদের তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার বেশি।  ফলে প্রকল্পই যে একমাত্র কারণ, তা অবশ্য  বলা যায় না। সর্বশিক্ষা মিশনের একাধিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলেই সারা দেশে স্কুলছুটের সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে কমানোর প্রয়াস শুরু হয়েছিল। বলা বাহুল্য সেই সময় থেকেই মেয়েদের স্কুলমুখী করার ধারাও  শুরু।

তবে  সকল রাজনৈতিক তরজা এবং বিভিন্ন অংশের বক্তব্যের উর্ধে গিয়ে একটা প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।  ছেলেরা কি বাস্তবিকই  পেটের  জ্বালায়  স্কুলছুট  হয়ে কাজে চলে যাচ্ছে আর মেয়েরা  কি নানাবিধ প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে আরও  বেশি সংখ্যায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে ? এই ধারা বছরে বছরে বেড়েছে। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি। এভাবেই কি চলতে থাকবে  তথাকথিত   ‘নিউ নর্মাল’ ? সময় বলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *