
যুগবীক্ষণ ডিজিটাল নিউজ ডেস্ক :-
কলকাতা, ১৩ জুন :ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা গুজরাতের অহমদাবাদে ।এয়ার ইন্ডিয়ার ‘এআই১৭১’ বিমানটি মাটি ছাড়ার ২-৩ মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসক-পড়ুয়াদের হস্টেলে ভেঙে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গেই ওই বিমানে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার আগে অবশ্য সাহায্য চেয়ে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর কাছে ‘মেডে কল’ পাঠান পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল। এখন প্রশ্ন হল, কী এই ‘মেডে কল’? কী ভাবেই বা এটি এটিসির কাছে পাঠান পাইলট? এর পেছনে রয়েছে চমকপ্রদ ইতিহাস।
কি এই ‘মেডে কল ‘? কারা এই সংকেত পাঠাতে পারেন ?কাদের কাছে ?
‘মেডে কল’ হল প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বেতারে পাঠানো একটি বিপদসঙ্কেত।বিমানের ইঞ্জিনে যান্ত্রিক ত্রুটি, অগ্নিকাণ্ড ,বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি কারণে জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি হলে এই ‘মেডে কল’ দিয়ে থাকেন পাইলট।এই রেডিয়ো সিগন্যাল ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে জাহাজের ক্যাপ্টনদেরও ।এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর কাছে ‘মেডে কল’ পাঠান পাইলট বা ক্যাপ্টেন।

এই বিপদ সঙ্কেত দেওয়ার কোনো নিয়ম রয়েছে কি?
একবার নয় নিয়ম অনুযায়ী বিমান বা জাহাজের চালককে পর পর তিন বার বেতারে এই বিপদসঙ্কেত পাঠাতে হয়। ট্রান্সমিশনে ত্রুটির কারণে যাতে সেই সঙ্কেত পেতে কোনও সমস্যা না হয়, তাই এই ব্যবস্থা। উড়োজাহাজ থেকে ‘মেডে সঙ্কেত’ এলে সমস্ত কাজ বাদ দিয়ে এর যাত্রীদের রক্ষা করার জন্য তৎপর হয় এটিসি। এ ক্ষেত্রে পাইলট, বিমানটির পরিচয়, তার জরুরি অবতরণের জায়গা এবং বিমানে থাকা যাত্রীসংখ্যা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করার নিয়ম চালু রয়েছে।
ইতিহাস কী বলছে?

১৯২০-র দশকের গোড়ার দিকে লন্ডনের ক্রয়ডন বিমানবন্দরের বেতার আধিকারিক ফ্রেডেরিক স্ট্যানলি মকফোর্ড এই ‘মেডে কলে’র সূচনা করেন বলে জানা যায় । ফরাসি শব্দ ‘মেডর’ (m’aider) থেকে উৎপত্তি এই বিপদ সংকেতটির।এই ফরাসি শব্দটির অর্থ হল, ‘আমাকে সাহায্য করুন’। মকফোর্ডের যুক্তি ছিল, বেতারে এই সঙ্কেত ভেসে এলে বিমান যে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, তা সহজেই বোঝা যাবে।
প্রথম ‘মেডে কল ‘ এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা
সূচনার বছর তিনেকের অর্থাৎ ১৯২৩ সালের মধ্যে উড়োজাহাজের পাইলট এবং জাহাজের ক্যাপ্টেনদের কাছে দুর্ঘটনার সময়ে সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেতারসঙ্কেতটি আদর্শ হয়ে ওঠে। ১৯২৭ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ‘মেডে কল’।এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ১৯০৬ সাল থেকে অবশ্য জাহাজে সোর্স কোড বেতার সঙ্কেত যেটির পোশাকি নাম ‘এসওএস’ বা সেভ আওয়ার সোলস এর ব্যবহার শুরু হয় । এর পাশাপাশি ‘মেডে কল’কে আলাদা করে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিমানচালক ও নাবিকদের যে ভীষণরকম বাড়তি সুবিধা হয়েছে,তা বলা বাহুল্য।
আহমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা ও’ মেডে কল’
গত ১২ জুন পাইলট বিমানবন্দরের ২৩ নম্বর রানওয়ে থেকে দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে মাটি থেকে ওড়া শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার ‘এআই১৭১’। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এটিসিতে ‘মেডে কল’ দেন এর চালক ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল। এটিসি পাল্টা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে দুর্ভাগ্যবশত কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।কিছুক্ষনের মধ্যেই বিমানটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।